Description
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের গল্প-বিশ্ব এক ভিন্ন জগতের কথা বলে। গ্রামবাংলার আশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভৌমগুন ও রহস্যময়তাকে নিজের অভিজ্ঞতার স্বকীয়তায় ভেঙেচুরে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘অন্য এক আখ্যানময় নৈসর্গিক কল্প-গল্প জগৎ’। এহেন লেখকের লেখা নিপাট ভয়ের হাড় কাঁপানো কাহিনি খুঁজে বের করা বেশ দুরূহ কাজ। ছোটোদের জন্য লেখা ভূতের গল্পে তার তৈরি দুটি চরিত্র ‘ছোটোমামা’ এবং ‘মুরারিবাবু’ বার বার ফিরে এসেছেন। এই গল্পগুলির অধিকাংশই খুবই হালকা চালের মজাদার ভূতের গল্প। ‘ভয়’ সেখানে খুব সামান্যই উপস্থিত। তাই এই সংকলনে সযত্নে এই গল্পগুলি পরিত্যাজ্য হয়েছে। সেই কারণে বাজার-চলতি ‘ভয়-ভূতুড়ে সংকলন’ গ্রন্থগুলিতে লেখকের যে ভূতের গল্পগুলি বার বার ফিরে আসে যেমন ‘ছক্কা মিয়ার টমটম’ বা ‘মুরারি বাবুর ঘড়ি’— এ-রকম গল্পগুলি এই সংকলনে অনুপস্থিত। এই বইতে লেখকের তুলনামূলক সিরিয়াস ভয়ের কাহিনিগুলি (সেগুলি কেবল ভূতের গল্পই নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও কল্প বৈজ্ঞানিক ভয়ের গল্পও) এখানে সংকলিত হয়েছে। এ ছাড়া লেখকের একাধিক অগ্রন্থিত রচনাও এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত করা হল।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জন্ম ১৪ অক্টোবর, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রামে। পাঁচের দশকের শেষাশেষি গল্প-উপন্যাসই তাঁর আত্মপ্রকাশের বাহন হয়ে ওঠে। কথাকার সিরাজের প্রাথমিক সাফল্য ছোটোগল্পে, প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এবং এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন স্বভাবত স্বতন্ত্র। তবে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নীল ঘরের নটী’ ১৯৬৬ সালে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত উপন্যাস এবং গল্পসংকলন নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। রহস্য কাহিনি রচনায় তিনি নিজস্ব একটি ঘরানা সৃষ্টি করে গিয়েছেন। প্রকৃতিবিদ কর্নেল নীলাদ্রী সরকার তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র। ছোটোদের জন্যও লিখেছেন প্রচুর। রোমাঞ্চকর ও মজাদার ভৌতিক কাহিনি লিখে তিনি ছেলে-বুড়ো সব শ্রেণির পাঠকের মন জয় করেছেন।
ইংরেজি এবং ভারতীয় সব প্রধান ভাষায় সিরাজের বহু উপন্যাস ও ছোটোগল্প ভাষান্তরিত হয়েছে। সাহিত্যে স্বীকৃতি এবং মর্যাদা হিসেবে সিরাজ পুরস্কৃত হয়েছেন বেশ কয়েক বার। ‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ভুয়ালকা পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। এ ছাড়া আনন্দ পুরস্কার, বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার, শৈলজানন্দ পুরস্কার, সুরমা চৌধুরী স্মারক সম্মান, নরসিংহদাস স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি আরও কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সিরাজকে সাম্মানিক ‘ডি লিট’ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছিল। আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বিশ্ব লেখক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন সিরাজ। সেখানেও সাম্মানিক ‘ফেলোশিপ’ প্রদান করা হয় তাঁকে।
Reviews
There are no reviews yet.